Please share-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

নির্দিষ্ট গল্প পড়তে ক্লিক করুন অথবা পড়া চালিয়ে যান-

 ভূমিকা:

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা যারা দু:খ ও কষ্টময় বা চেলেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছেন এবং কোনভাবেই সফল হতে পারছেন না, আপনারা আমার আজকের এ পোস্টটি পড়লে আশা করি আপনাদের কাছে এ পোস্টটি ভালো লাগবে।

জীবনে যারা সফল হয়েছেন তাদের সে সফলতার কিছু গল্প ও উপদেশ পড়লে আপনার হতাশা কিছুটা কমতে পারে। আপনি পেতে পারেন অনুপ্রেরণা। আপনি দেখতে পারেন ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন স্বপ্ন।

কিন্তু তারপরও মনে রাখবেন গল্পতো গল্পই, ইতিহাসতো ইতিহাসই।

তার মানে মানুষের মুখে মুখে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ব্যক্তিদের নামে এমন অনেক গল্প রয়েছে, যা আসলে সত্য নয়। এমনকি অনেক ইতিহাস ও জাল হাদিসের গল্পও রয়েছে, যার সত্য হওয়ার বিষয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।

এখানে আমি যে সব গল্প উল্লেখ করছি, যদিও এগুলো অনেকে সত্য মনে করেন; তবুও আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে এগুলোর সব ঘটনা পুরোপুরি সত্য নয়। হয়তো কিছুটা সত্য, আবার কিছুটা মিথ্যা।

গল্পাকার হয়তো নিজ থেকে এগুলো জুড়ে দিয়েছেন তাদের নামে। সে যাই হোক সত্য হোক আর মিথ্যা হোক (বেশির ভাগ সত্য বলেই মনে করি। তবুও এগুলোকে সত্য বলে কোথাও তর্ক জুড়িয়ে দিবেন না। এ রকম কোন গ্যারান্টি আমরা আপনাদেরকে দিচ্ছি না, তবে), এ থেকে শিক্ষা নিতে তো আর দোষ নেই।

আবার কোনটি সত্য গল্প, কোনটি মিথ্যা বা কোনটি সত্য মিথ্যায় মিশ্রিত, তা জানানো বা সে সত্য-মিথ্যা নির্ণিত করা, ইহা আমার এ পোস্টের উদ্দেশ্য নয়।

তাই এ বিষয়ে আমার পরামর্শ হচ্ছে, সফলদের নামে কৃত্তিম হোক বা অকৃত্তিম হোক, গল্প গুলো পড়ুন এবং এ থেকে শিক্ষা অর্জন করতে চেষ্টা করুন।

কিন্তু বিষয়টা এমন হবে না যে, সে সফল ব্যক্তির গল্পের মতো আপনার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি তাই ঘটবে বা ঘটতে পারে।

তাদের মতো অপেক্ষা করতে করতে বা সহ্য করতে করতে আপনি আপনার শেষ নি:শ্বাসটাও ত্যাগ করে ফেলবেন; ইহা কাম্য নয়।

আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন এবং নিজের যোগ্যতা ও সীমা সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করুন ও সে অনুযায়ী যুক্তি-বুদ্ধি মোতাবেক সংগ্রাম করুন। কখনো ধৈয্য-সহ্যের মাধ্যমে, আবার কখনোবা আর বসে না থেকে বা প্রতিবাদ করার মাধ্যমে। তবে সফল মানুষদের একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা বার বার চেষ্টা করে; কখনো হার মানতে চায় না।

দেখুন স্বপ্নকে যদি আপনি ছুঁতে না পারেন, তাহলে আপনি আপনার রাতজাগা কষ্টগুলো হয়তো আর কোনোদিনই কারো কাছে ব্যক্ত করতে পারবেন না! আর কখনো ব্যক্ত করতে চাইলেও সেগুলো শোনার মতো তেমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাবেন না! কারণ, ব্যর্থতার গল্প মানুষ স্বাভাবিকভাবে শুনতে অভ্যস্ত নয়। মানুষ চায় সফলতার গল্প শুনতে। মানুষ সফলদের অভিবাদন জানাতে চায়। ব্যর্থদের অভিবাদন জানানো তো দূরের কথা মানুষ তাদের খোঁজ-খবর নেয়াটাকেও উৎকট বাড়তি ঝামেলা মনে করে!

তাই স্বপ্ন ছুঁতে গিয়ে মাঝপথ থেকে কখনো ফিরে আসা যাবে না। সামনে যা কিছুই অপেক্ষা করুক না কেন, আপনাকে এগিয়ে যেতেই হবে। কারণ,  সামনে এগিয়ে গেলে জয় বা পরাজয় যে কোনো একটা হতে পারে। কিন্তু পিছনে ফিরে গেলে পরাজয় সুনিশ্চিত! তাই আপনার যে কোন প্রতিষ্ঠান বা যে কোন কিছু হুট করেই বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনাকে উজ্জিবীত করতে, অনুপ্রেরণা দিতে, আমি আপনার জন্য ব্যবস্থা করেছি, মোটিভেশন মূলক কিছু বাস্তব গল্প বা কিছু বাস্তব ইতিহাস।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

তো চলুন আপনাদের মনোবল চাঙ্গা করতে শিক্ষণীয় সে সব গল্প বলা শুরু করি-

১। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের গল্প:

নিজকে  কখনো  স্থুলবুদ্ধি বা অপয়া বা আমার দ্বারা হবে না; এ রকম অযথা ভয় করে, কোন কাজ ছেড়ে দিবেন না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের নামে প্রচলিত গল্পটি পড়তে পারেন। গল্পটি নিম্নরুপ-

বৈদ্যুতিক বাতির আবিস্কারক বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এর নামে এ গল্পের  কাহিনি আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন। তারপরও আজকে আপনাদের অনুপ্রেরণার উদ্দেশ্যে আমি আবার গল্পটি মনে করিয়ে দিচ্ছি-

এডিসন পড়াশোনাতে বেশ দূর্বল ছিলেন। সেবার পরীক্ষার খাতায় তেমন ভালো করতে পারেননি। ফলে তার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘চিঠিটা যেনো খোলা না হয়। সোজা মায়ের হাতে দেয়া হয়।

এডিসন মায়ের হাতে চিঠি দিলেন এবং চিঠিতে কি লেখা কৌতুহলবশত মায়ের কাছে জানতে চাইলেন।

তার মা আওয়াজ করে এডিসনকে শুনিয়ে বললেন,‘আপনার পুত্র খুব মেধাবী, এই স্কুলটি তার জন্য অনেক ছোটো এবং এখানে তাকে শেখানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি নিজেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করুন।’

তারপর থেকে তিঁনি মায়ের কাছেই শিক্ষা নেওয়া শুরু করলেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পর টমাস আলভা এডিসন হয়ে উঠেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, শিল্পপতি এবং মার্কেটিং জগতে সফল উদ্যোক্তা।

কিন্তু তাঁর মা সেসময় বেঁচে ছিলেন না। হঠাৎ একদিন পুরানো কাগজ নাড়তে থাকেন। ভাঁজ করা এক কাগজের দিকে চোখ আটকে যায়। চিঠিটি খুলে দেখেন সেই পুরানো স্কুলের চিঠি। আবেগতাড়িত হয়ে যান। মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠে সেসব দিনের কথা।

সেই চিঠিতে লেখা ছিল- ‘আপনার সন্তান স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, সে এই স্কুলের উপযুক্ত নয়, আমরা কোনোভাবেই তাকে আমাদের স্কুলে আর আসতে দিতে পারি না’।

তারপর এডিসনের চোখ ভিজে যায়! তাঁর মায়ের কথা ভীষণ মনে হয়। ডাইরীতে লিখে রাখলেন তখন,‘টমাস আলভা এডিসন মানসিক অসুস্থ এক শিশু ছিলেন কিন্তু তার মা তাকে শতাব্দীর সেরা প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।’

ভাই ভয় পাবেন না। হালছাড়বেন না। এমনও হতে পারে পারিপাশ্বিক বা অদৃশ্য কোন বাধার কারণে আজ আপনি এগুতে পারছেন না। চার দিকে অপমাণিত হচ্ছেন। হয়তো আপনার বাধার মেঘ কেটে গেলে বা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে, (হয়তো টমাস আলভা এডিসনে মতো মাতৃস্নেহের পরিবেশ আপনার ভাগ্যে জুটবে না, তবু সময় পাল্টাতেওতো পারে!) আপনিও হতে পারেন পৃথিবীর সফল ব্যক্তিদেরকে অনুস্বরণের মতো একটি ইতিহাস।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

২। KFC এর প্রতিষ্ঠাতা কলনেল স্যান্ডার্স এর জীবন কাহিনী:

মনোবল অটুট রাখতে এবং জীবন-যুদ্ধে প্রেরণা খুঁজে পেতে নিম্নে উল্লেখিত বুড়ো বয়সে সফল হওয়া ব্যক্তির এ গল্পটি পড়তে পারেন।

KFC ( Kentucky Fried Chicken- এমেরিকান ফাস্টফুড) এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব কলনেল স্যান্ডার্স এর জীবন কাহিনীতে রয়েছে অসম্ভব এক অনুপ্রেরণা। পড়ে দেখতে পারেন। আমি আশাবাদী ইনশা’আল্লাহ আপনার হতাশা কেটে যাবে। তার জীবন কাহিনী সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো:

মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। ১৬ বছর বয়সে স্কুল থেকে ঝরে পড়েন। ১৭ বছরের মাথায় মোট ৪ বার চাকরী হারিয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি বাবা হন। ২০ বছর বয়সে তার স্ত্রী তাঁকে ফেলে রেখে চলে যায়; আর কন্যা সন্তানটিকেও নিয়ে যায় সাথে করে।

সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং সেখানে ব্যর্থ হন। ইনস্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগদান করেন এবং সেখানেও সফলতার দেখা পাননি। নিজের মেয়েকে নিজেই অপহরণ করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেও ব্যর্থ হন। চাকরী নিয়েছিলেন রেললাইনের কন্ডাকটর হিসেবে, সুবিধে করতে পারেন নি।

অবশেষে এক ক্যাফেতে রাধুনীর চাকুরী নেন। ৬৫ বছর বয়সে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন। অবসরে যাবার প্রথম দিন সরকারের কাছ থেকে ১০৫ ডলারের চেক পেয়েছিলেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল জীবন তাঁর মূল্যহীন।

আত্মহত্যা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এরপর একটি গাছের নিচে বসে জীবনে কি কি অর্জন করেছেন তাঁর একটা লিস্ট বানাতে শুরু করলেন।

তখন তাঁর কাছে মনে হল জীবনে এমন কিছু করবার বাকি আছে, যা তিনি আসলে করতে পারতেন; যা তার মতো আর কেউ হয়তো পারবে না। আর তিনি বাকি সবার চাইতে এ বিষয়টির ব্যাপারে একটু বেশি জানেন। আর তা হল রন্ধনশিল্প।

তাই চিন্তা মোতাবেক তিনি ৮৭ ডলার ধার করলেন এবং সেই চেকের বিপরীতে আর কিছু মুরগী কিনে এনে নিজের রেসিপি দিয়ে সেগুলো ফ্রাই করলেন।

এরপর Kentucky তে (এমেরিকার একটি জায়গার নাম) প্রতিবেশীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সেই ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করা শুরু করলেন!

এবারও তিনি ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন, ১০০৯ টি রেস্টুরেন্টে তার রেসিপি চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন । অবশেষে ১০১০ তম রেস্টুরেন্ট তার ডাকে সাড়া দিলো ।

এবং জন্ম নিল KENTUCY FRIED CHICKEN (কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন) তথা KFC…

৬৫ বছর বয়সে তিনি দুনিয়া ছাড়তে চেয়েছিলেন আর ৮৮ বছর বয়সে এসে Colonel Sanders বিলিয়নার বনে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ কয়েক বিলিয়িন ডলারের মালিক হয়ে যান। এবং পৃথিবীতে  স্মরণীয় হয়ে আছেন KFC এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে!

—– তাই, হতাশ হবার কিছু নেই। আপনার হাতে এখনো অনেক সময় আছে বিলিয়নার হবার…শুধু চেষ্টাটি প্রয়োজন! হতাশ না হয়ে সঠিক পরিকল্পনা করে সমানের দিকে এগিয়ে যান। দেরিতে হলেও, অবশ্যই আপনি সফলকাম হবেন।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৩। স্যার আইজ্যাক নিউটনের গল্প:

এবার যার গল্প শোনাবো, তিনি আমাদের সবার পরিচিত, স্যার আইজেক নিউটন। বিজ্ঞান শাশ্রে যার অবদান হয়তো পৃথিবীর মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনারা জীবনে কয়বার ব্যার্থ হয়েছেন? বা কতটুকুইবা ঘাত প্রতিঘাত আপনার জীবনে? অনেকটা বিজ্ঞানের বাবার ভূমিকায় যার নাম, তার ইতিহাসটা একটু পড়ে দেখুন। নিশ্চয়ই আপনার হতাশা কেটে যাবে। পাবেন নতুন উদ্দীপনা।

তো শুরু করুন গল্পটি পড়ার। গল্পটি নিম্নরুপ-

স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগে। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক শিশু মাতৃগর্ভে যে পরিমাণ সময় থাকার পর ভূমিষ্ট হয়, তার অনেক আগে।

তাই যৌক্তিক ভাবেই জন্মের পর থেকে তিনি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। এমন দুর্বল একটি শিশুর ভূমিষ্ট হওয়ার তিনমাসের মধ্যেই নিউটনের বাবা মারা যান।

আবার পিতার দেহ ত্যাগের মাত্র তিন বছর পরেই, নিউটনের মা আবার একটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সৎ বাবার কাছে ঠাঁই হয়নি শিশু নিউটনের। দুর্বল নিউটন তার দাদীর কাছে বড় হতে থাকেন। ভূমিষ্ট হওয়ার মাত্র তিন মাস পরেই তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মাত্র তিন বছর পার হতেই, মায়ের স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হলেন তিনি।

যখন নিউটনের একটু বোঝার ক্ষমতা হল, তখন থেকেই তার মা এবং তার সৎ বাবার প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব তার মধ্যে জন্ম হয়।

পিতা-মাতার আদর আর মায়ের স্নেহ-মমতা ছাড়া বেড়ে উঠা, একজন শিশুর মধ্যে এরূপ মনোভাব জন্ম নেওয়াটাই স্বাভাবিক।

এরপর তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানেই চলতে থাকে তার পড়াশোনা। নিউটনের বয়স যখন পনেরো বছর, তখনই তার সৎ পিতার মৃত্যু হয়।

স্বামীর মৃত্যুর পর, নিউটনের মা, পুনরায় নিউটনের দাদীর বাড়িতে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর-পরই, তিনি নিউটনের পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, এবং তাকে খামারে কাজ করতে যেতে বলেন, যাতে করে কিছু অর্থ হাতে আসে!

কিন্তু নিউটন পড়াশোনা ছেড়ে খামারে কাজ করতে মোটেই ইচ্ছুক নয়। এমন পরিস্থিতিতে নিউটনের রক্ষাকর্তা হিসেবে নেমে আসেন একজন শিক্ষক। তিনি নিউটনের পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক দেখে, পুনরায় নিউটনের শ্রেণীকক্ষে ফেরার ব্যবস্থা করেন।

এত সংঘর্ষময় জীবনে থাকার পরেও, তার জীবনে প্রেম এসেছিল। এক মেয়ের সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেই প্রেম বিবাহে পরিণতি হয়।

যখন তারা বিবাহ করেছিলেন, তখন নিউটনের বয়স ছিল মাত্র উনিশ বছর। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই মেয়েটি নিউটনকে ছেড়ে চলে যায়।

যাকে তিনি জীবন সঙ্গী হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন, সেও তাকে ছেড়ে চলে গেল। এরপর তিনি আবার একা হয়ে গেলেন। এরপর নিউটন সারাজীবন অবিবাহিত ছিলেন।

এভাবেই দুর্ভাগ্য নিয়ে তার পথ চলা শুরু হয়েছিল। কঠোর মনোবল নিয়েই আবার পড়াশোনায় মননিবেশ করলেন।

রক্তে যার সংগ্রাম আছে, জীবনযুদ্ধে সে হারবে কিভাবে? ভাবছেন, তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত বিচক্ষন ছিলেন?

উঁহু মোটেই তা নয়। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন মাঝারি ধরনের। তবে তার মধ্যে ‘বদলা’ এই শব্দটার প্রতিফলন প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত।

কিন্তু তার বদলা নেওয়া আর আমাদের বদলা নেওয়ার মধ্যে ছিলো বিস্তর ফারাক।

আমরা বদলা নেওয়া বলতে বুঝি, লড়াই করা। কিন্তু নিউটনের ক্ষেত্রে বদলা নেওয়ার অর্থ ছিল, নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে হাসিল করা। আর এই প্রচেষ্টাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন।

একবার স্কুলের এক ছাত্র তাকে নানান ভাবে অপমান করে। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে, পরের বছর মাঝারি মেধাবী ছাত্র নিউটন হয়ে গেলেন ক্লাসের সেরা ছাত্র।

কলেজ জীবনে তিনি কলেজের ফিস এবং নিজের খরচ চালানোর জন্য কলেজের একজন কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতেন। সেই সময় বিজ্ঞান ছিল অ্যারিস্টটলের ধারণা কেন্দ্রিক।

কিন্তু নিউটন চাইছিলেন, এই ধারনাকে আরও উন্নত এবং আধুনিক করতে। তিনি অ্যারিস্টটলের ধারনার মধ্যে কিছু একটা অনুপস্থিতি অনুভব করেছিলেন।

১৬৬৪ সালে নিজ প্রতিভার কারণে কলেজ তাকে স্কলারশিপের বন্দোবস্ত করে দেয়।

এখান থেকেই তার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। এরপর শুরু হল বিস্তর অধ্যয়ন ও নতুনকে জানার প্রচেষ্টা। আর এর পরের গল্প তো আমাদের সবারই জানা।

মধ্যাকর্ষণ থেকে শুরু করে, উড়োজাহাজ যে শর্তের উপর আজ আকাশে উড়ছে, সবই নিউটনেরই গবেষণার ফসল।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৪। মি:বিন এর সাফল্যের গল্প:

যারা শারীরিক অযোগ্যতাকে সফলতার অন্তরায় মনে করতেছেন, তারা মি: বিন এর গল্পটি পড়তে পারেন। ইনশা’আল্লাহ আপনার কাছে ভালো লাগবে। গল্পটি নিম্নরুপ-

মি. বিন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন।  স্কুলে তার চেহারা নিয়ে সবাই মজা ও হাসিতামাশা করত। এ জন্য তিনি বন্ধু ছাড়া সাইডলাইনড শিশু ছিলেন। কেউ আশা করেনি তিনি একজন বিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক‍্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং – এ মাস্টার্স করেন।

অভিনয়ের প্রতি বরাবরই তার আগ্রহ ছিল। কিন্তু বাক বিসংগতির কারণে তিনি অভিনয় এবং অনেক টিভি শো দ্বারা প্রত‍্যাখ‍্যাত হয়েছিলেন।

এরপর তিনি একটি কমেডি গ্রুপে যোগদান করেন। কিন্তু সেখানেও তার কথা বলার বিষয়টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

তারপরও তিনি নিজের উপর বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন। কমেডির প্রতি অধিক মনোনিবেশ এবং কথা বলার কঠোর অনুশীলন করতে থাকেন।

এরপর যেখানেই তিনি কমেডি শো করেছেন সেখানেই সফল হয়েছে। মিস্টার বিন ফিল্মস সিরিজ তাকে বিশ্বব‍্যাপী বিখ্যাত করেছে।

তিনি প্রমাণ করেছেন যত বাঁধাই থাকুক, তার চেহারা এবং কথা বলা – এটি কোন ব‍্যাপার না।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা মিঃ বিন এবং তার জীবন কাহিনিকে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক স্থুলকায় ব্যক্তিগণ অনুপ্রেরণা মূলক গল্প হিসাবে মনে করে এ গল্প থেকে প্রেরণা খুঁজে পেতে পারেন।।

আসলে জীবনে প্রতিটি ব্যক্তিরই রয়েছে তার নিজস্ব কিছু যোগ্যতা ও দক্ষতা। যা অন্যের মাঝে নেই।  জীবনে কেউ নিখুঁত হয়ে জন্ম নেয় না। তাই, আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে, কিভাবে আপনার দুর্বলতা এবং ব‍্যর্থতা পেরিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৫। সফল হওয়া ২ টি ব্যঙের গল্প:

এবার আপনাদেরকে উপদেশ মূলক গল্প শোনাবো। দেখুন আপনি হয়তো কোন একটি বিষয় নিয়ে চেষ্টা করছেন। কেউ হয়তো আপনাকে সাড়া বা পাত্তা দিচ্ছে না।

কিন্তু আপনি স্থির ভাবে জানেন যে, আপনি কী করছেন এবং আপনি এও জানেন যে, আপনার দ্বারা সম্পাদিত বিষয়টি মানুষের জন্য উপকারি ও এ কাজে আপনার যোগ্যতা, উপযোগিতা, মনোবল রয়েছে এবং যুক্তির বিচারে আপনি আশাবাদি যে, ইনশা’আল্লাহ অবশ্যই আপনি পারবেন। তাহলে নিম্নে আমি আপনার জন্য ২ টি ব্যাঙের ১টি সুন্দর গল্প তুলে ধরলাম। পড়ে দেখুন আপনার ভালো লাগবে। গল্পটি নিম্নরুপ-

একবার দুটি ব্যাঙ ঘুরতে ঘুরতে একটি গর্তের মধ্যে পড়ে গেল। গর্তের ভিতর আরও অনেক ব্যাঙ ছিল যারা কোনভাবে গর্তে পড়ে গেছে। এবার নতুন ব্যাঙ দুটি খুব লাফাতে শুরু করলাে। ওই গর্ত থেকে বেরােনাের জন্য। তখন পূর্ব থেকে গর্তের মধ্যে আঁটকে পড়া পুরনাে ব্যাঙ গুলো চিৎকার করে বলতে লাগলাে এই গর্ত থেকে বেরােনাে অসম্ভব।

তবুও দুটি ব্যাঙ কারাে কথা শুনল না চেষ্টা চালিয়ে গেল। পুরনাে ব্যাঙ গুলির কথা শুনে দুটি ব্যাঙ এর মধ্যে একটি ব্যাঙ লাফানাে বন্ধ করে দিল। কিন্তু আর একটি ব্যাঙ আরাে জোরে জোরে লাফাতে শুরু করলাে । অবশেষে আরাে কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর ওই ব্যাঙটি লাফিয়ে বাইরে যেতে সক্ষম হল।

এবার আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে দ্বিতীয় ব্যাঙটি লাফানাে বন্ধ করলাে না কেন?

আসলে দ্বিতীয় ব্যাঙটি কানে শুনতে পেত না।

তাই যখন সব ব্যাঙ হাত-পা নাড়িয়ে চিৎকার করে বলছিল এটা অসম্ভব। তখন সে ভাবছিল সবাই তাকে হয়তো উৎসাহিত করছে আরাে জোরে লাফানাের জন্য। তাই সে আরাে জোরে লাফাতে শুরু করেছিল।

আমাদের জীবনেও সফলতা পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কান বন্ধ রাখা উচিত। যাতে লােকের নেগেটিভ কথা আমাদের কানে না পৌঁছায় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সফল হচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত যেন লেগে থাকতে পারি।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৬। বিফল হওয়া একটি ব্যঙের গল্প:

প্রত্যেক মানুষেরই ধৈয্য-সহ্যের এবং ক্ষমতার একটি সীমারেখা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার সীমারেখা কতটুকু। এ সীমারেখা পেরিয়ে গেলে তখন হয়তো আরো ধৈয্য ধরার বা সহ্য করার কারণে আপনি এবার হয়তো নিজেই হারিয়ে যাবেন এবং আপনার অধীনস্থদের উপর হয়তো আপনার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে যাবে। তো এ বিষয়ে আসুন আমরা একটি ব্যঙের গল্প শুনি। গল্পটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

একবার একটি সবল ও সতেজ ব্যাঙ লাফাতে লাফাতে রাস্তার দিকে যাচ্ছিলো। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ সে একটি হাঁড়িতে রাখা পানির মধ্যে পড়ে গেলো। ব্যঙটির নিকট এই পানির মধ্যে বসে থাকা ভালো লাগছিলো । তাই সে চুপচাপ বসে রইলো এবং মনে মনে ভাবলো একটু পরে লাফিয়ে চলে যাবে।

এদিকে এই হাঁড়িটি রেখেছিলো এক মহিলা কিছু রান্না করার জন্যে; একটু পরেই তিনি হাঁড়িতে আগুন দিবেন এ উদ্দেশ্যে। তো যথারীতি তিনি আগুন দিলেন।

ওদিকে ব্যাঙটি মনে করলো, আর একটু জিরুই; এ সামান্য গরমতো আমার জন্য কিছুই না। মহিলাটি আগুন বেয়েই চললো।

আর ব্যাঙটি মনে করলো, একটু পরেই লাফিয়ে চলে যাবো, এখনো এটা আমার জন্য মামুলি ব্যাপার।

এই করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে গেলো। এবার ব্যাঙের বুদ্ধিয়ে ধরেছে, না এবার বেরিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু যেই সে লাফ দিতে চাইলো, তখন তার পা আর নড়ে না। শত চেষ্টা করেও সে আর লাফ দিয়ে বেরুতে পারলো না। ফলে ব্যাঙটি ঐ হাঁড়ির মধ্যেই প্রাণে মারা গেলো।

এভাবে আপনাকে আর আমাকেও বুঝে-শুনে একটা সময় পর্যন্ত ক্ষমা করতে হবে বা প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ ঠিকই অথবা পূর্বোক্ত গল্প গুলো অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন, অধ্যবসায় আর সাধনা করবেন, ঠিকই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তা যেন কিছুতেই আপনার সীমানা পেরিয়ে না যায়।

তাই আপনার যোগ্যতা অভিজ্ঞতা বা উপযোগিতা অনুযায়ী একটা সময় পর অবশ্যই আপনাকে প্রতিবাদ করতে হবে অথবা আপনার লোকসানি খাতে আর পুঁজি বা শ্রম না দিয়ে তা বন্ধ করে দিতে হবে। নতুবা আপনি আরো বিপদে পড়তে পারেন। কারণ সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে এদেরকে শাস্তি না দিলে, এরা আপনার মহত্বের কোন মূল্যই দেবে না; বরং আপনাকে তারা সোজা পেয়ে আরো বিপদে ফেলবে   অথবা আপনার উদ্যোগকৃত প্ল্যান্টটি বন্ধ না করে দিলে আরো লোকসানের মুখে পড়বেন। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৭। সারা জাহানের বাদশা আল্লাহর নবী সোলায়মান (আ:) এঁর ঘটনা:

দেখুন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সব সময় মহান রবের উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আপনি চেষ্টা সাধনা সবই করবেন; কিন্তু রব ভাগ্যে রাখলে পাবেন, নতুবা পাবেন না; অথবা আপনি পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু যেহেতু মানুষের জ্ঞান সামান্য, তাই যে কোন অদৃশ্য কারণে আপনি যতই সাধনা করছেন, তবুও আপনি পাচ্ছেন না বা আপনাকে দিয়েও আবার কেডে নেয়া হয়েছে, এ বিষয় গুলোতে আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে রবের প্রতি খুশি থাকতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে, যে কোন ব্যক্তির ক্ষমতা বা যোগ্যতা মহান রব কেডে নিতে পারেন। আসলে আল্লাহ কাকে কিভাবে পরীক্ষা করবেন আমরা তা কেউই জানি না। তো আসুন এ বিষয়ে সারা দুনিয়ার বাদশা হযরত সোলায়মান (আ:) কেমন করে একেবারে সাধারণ মানুষ হয়ে গিয়ে ছিলেন, সে ঘটনাটি সংক্ষেপে শুনুন-

আপনারা জানেন বাদশা সোলায়মান (আ:) এঁর হাতে একটি আঁংটি ছিলো এবং এ আঁংটিটিই ছিলো তাঁর বাদশাহীর মূলমন্ত্র। অর্থাৎ সমস্ত প্রাণি, জীব, জন্তু জানোয়ার, জ্বীন, ইনসান সকলেই তাঁর আংটি দেখেই তাঁকে রাজা বলে মেনে নিতো।

একবার একটা জ্বীনের লোভে ধরলো, সে সোলাইমান (আ:) এঁর বাদশাহী দখল করবে। শুরু করলো সে সোলাইমান (আ:) এঁর গায়ের অবয়ব ধারণ করার ও কন্ঠস্বর সহ অবিকল নকল সোলাইমান (আ:) হতে। চলতে থাকলো তার তদবিরের।

জ্বীনটি তার তদবীরে সফল হলো। এখন শুধু সোলাইমান (আ:) এঁর আংটিটি হস্তগত করতে পারলেই পুরো দুনিয়ার রাজত্তি তার হয়ে যাবে।

তো নিয়ম ছিলো আঁংটিটি বাথরুমে নেয়া যাবে না। বাথরুমে যেতে ইহা খুলে যেতে হবে। আর আল্লাহর নবী সোলায়মান (আ:) প্রতিবার বাথরুমে যেতে তাঁর কোন এক কর্মচারীর নিকট আংটিটি রেখে যেতেন এবং পরে বাথরুম থেকে এসে আঁংটিটি আবার চেয়ে নিতেন।

রাজত্ব দখলের জন্য ওঁত পেতে থাকা, এ জ্বীন তার বুদ্ধি অনুযায়ী করলো কী, সোলায়মান (আ:) যখন একদিন বাথরুমে গেলেন, তখন যার কাছে আঁংটিটি রেখে গেলেন, তার নিকট থেকে আঁংটিটি চেয়ে নিলেন। আর তাকে দেখতে এবং কথা-বার্তায় সোলায়মান (আ:) এঁর মতো হওয়ায়, তাকে আঁংটিটি দিয়ে দেয়া হলো। মনে করা হলো তিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

এ জ্বীন সদস্যটি আঁংটিটি হাতে লাগানোর সাথে সাথে পুরো রাজত্বি তার হয়ে গেলো।

ওদিকে নির্দিষ্ট সময় পর আসল সোলাইমান (আঁ:) বাথরুম থেকে বেরিয়ে আঁংটিটি দাবী করলে, তাঁকে সকলে নকল সোলাইমান (আঁ:) মনে করে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দিলো।

ফলে একটু আগের সারা জাহানের এবং সমস্ত প্রাণিকুলের বাদশা, মুহূর্তে হয়ে গেলো একেবারে নি:স্ব। যার হাতে এখন আর কিছুই নেই। (ঘটনাটি অনেক লম্বা বিধায় আমি আর লিখলাম না। কারণ আমার উদ্দেশ্য এ ঘটনা বিবৃত করা নয়। আমার উদ্দেশ্য আল্লাহ চাইলে রাজাকেও মুহূর্তের মধ্যে ফকির বানিয়ে দিতে পারেন, সে বাস্তব প্রমাণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা)

তো দেখুন একজন বাদশা কেমন করে মুহুর্তের মধ্যে একেবারেই একা ও সম্পদহীন হয়ে গেলেন। তাহলে বলছিলাম, সম্পদ পাওয়া, না পাওয়া বা হারিয়ে ফেলা, এ বিষয় গুলোতে অবশ্যই রবের উপর ভরসা করতে হবে এবং তাঁর নিকটই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আপনি যদি কিছুদূর চেষ্টা তদবীর করে ব্যতি ব্যস্ত হয়ে যান বা কিছু হারিয়ে একবারে হা হুতাশ শুরু করে দেন; তাহলে ইহা অবশ্যই সাফল্যের অন্তরায়।

আবার যে কোন  বাহুবলে বা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সম্মান যশ-খ্যাতি অর্জন; এগুলো সাময়িক ভাবে ফলপ্রসূ মনে হলেও আসলে এগুলো সবই মিথ্যা। পৃথিবীর ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, এ জগতে যারাই মহিয়ান ও গরিয়ান হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ছিলো সরল-সহজ মানুষ। এদের কেউই বাহুবলে বা অবৈধ গ্রপিং বা লোবিং করে বা কোন ধরনের নীল নকশা করে তাদের সাফল্য অর্জন করেননি।

তাদের সকলেই কঠোর পরিশ্রম, নিজেদের মনোবলের উপর এক নজিরবিহীন ভাবে অটল থাকা এবং চেষ্টার পর চেষ্টা করা, ইত্যাদি কারণেই মূলত তারা সফল হতে পেরেছিলেন।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৮। ইসলামের নবী হযরত মুসা (আ:) এর ঘটনা:

দেখুন সাফল্য পেতে হলে সবচাইতে বেশি আপনিই জানেন, এ রকম ধারনা রাখতে পারবেন না। আপনি আপনার জেহাদে সাফল্যের আশাবাদি থাকবেন; কিন্তু বিষয়টা এমন হবে না যে, আপনি প্রতিপক্ষকে বা আপনার অধ্যবসায় বা সাধনা বা গবেষণার ফিল্ডকে দূর্বল ভাববেন। এ বিষয়ে ইসলামের নবী হযরত মুসা (আ:) এঁর একটি ঘটনা আপনাদেরকে শুনাচ্ছি (সংক্ষেপিত)-

একবার মুসা (আ:) এঁর জাতি তাঁর নিকট জানতে চাইলো, বর্তমানে সবচাইতে বেশি জ্ঞানী কে?

এটা স্বাভাবিক যে নবীর চাইতে বেশি জ্ঞানী আর কেউ হতে পারে না।

আর মুসাও (আ:) উত্তর দিলেন যে, তিনিই সব চাইতে বেশি জ্ঞানী।

মহান রবের নিকট তাঁর এ উত্তরটি পছন্দ মনে হলো না। তিনি মুসা (আ:) এঁর নিকট অহি পাঠালেন এবং বললেন তুমি মনেকর তুমি বেশি জ্ঞানী। কিন্তু তা বাস্তব নয়।

তোমার চাইতে বেশি জ্ঞানী দেখতে, তুমি একটা ভাজা করা (রান্না করা) মাছ নিবে এবং নদীর ধারে হাঁটবে।

যেখানে মাছটি জিন্দা হয়ে লাফ দিয়ে নদীতে পড়বে, নদীর সে স্থানেই তুমি এমন এক লোকের দেখা পাবে; যার সাথে সফর করলে তুমি বুঝতে পাবে, তোমার চাইতে জ্ঞানী লোক আছে কিনা?

কথা মতো মুসা (আ:) চললেন তাঁর সাথে সফর করতে। তিনি আর কেউ না, তিনি হলেন খিজির (আ:)।

তো খিজির (আ:) এঁর সাথে মুসা (আ:) এর দেখা হলো। খিজির (আ:) মুসাকে (আ:) শর্ত দিলেন যে, তাঁর সাথে সফর করতে হলে, তাঁকে (খিজির আ:) কোনরুপ প্রশ্ন করা যাবে না।

মুসা (আ:) রাজি হলেন। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর মুসা (আ:) এঁর দৃষ্টিতে খিজির (আ:) কয়েকটা অন্যায় কাজ করে ফেললেন। ফলে তাদের সফর আর স্থায়ী হলো না।

অন্যায় কাজ গুলো ছিলো, সফরের মধ্যে খিজির (আ:) এক মাঝির নৌকার মধ্যে ফুটো করে দিলেন যাতে নৌকাটি ডুবে যায়, মানুষের দ্বারা নির্মিত একটি দেওয়ালকে তিনি ফেলে দিলেন এবং একজন মানুষকে (বালক) থাপ্পড় দিয়ে মেরে ফেললেন।

মনুষ্য সমাজে যদিও এগুলো অন্যায় কাজ ছিলো; তবুও যেহেতু এ কাজে রবের সাপোর্ট ছিলো; তাই এগুলো খিজির (আ:) এঁর জন্য অন্যায় কাজ ছিলো না। আর এ কাজে খিজির (আ:) এঁর জ্ঞান ছিলো বিধায় তিনি রবের অনুকূলে এ কাজ গুলো করেছিলেন। যে ধরনের জ্ঞান গুলো মুসাকে (আ:) দেয়া হয়নি। অথচ তিনি বলেছিলেন তিনিই বেশি জ্ঞানী।

তাহলে একজন নবীর পক্ষে যদি, আমি বেশি জ্ঞানী ইহা বলা ভূল হয়, তবে আমাদের পক্ষে এ ধরনের কথাবার্তা, ধ্যানধারণা অবশ্যই ভূল।

আর এ সিটোয়েশনটি নি:সন্দেহে সাফল্যের অন্তরায়। তাহলে কে বেশি জ্ঞানী এ ধরনের প্রশ্নে বা নিজের মধ্যকার ভাবনায় অবশ্যই মনে করতে হবে আল্লাহই ভালো জানেন কে বেশি জ্ঞানী। এ মনোভাবটি হচ্ছে একজন সফল ব্যক্তির মনোভাব।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

৯। অহংকারী সাপের কিচ্ছা:

মানুষের প্রকৃত সাফল্য কী সাময়িক কোন সাফল্য? কখনোই না।

তাহলে স্থায়ী সাফল্য পেতে হলে জীবনে কখনো হিংসা, অহংকার ও দম্ভ; এগুলো করা যাবে না। তাহলে দেখুন, অহংকারী এ সাপটির কী অবস্থা হয়েছে-

এক বোনে এক সাপ বাস করতো। সাপটি ছিলো খুবই বিষাক্ত এবং বড়ই বদ মেজাজি ও অহংকারী। ফলে বনের সবাই তাকে ভয় পেতো এবং সে নিজেও খুব অহংকার করে চলতো।

যেখানেই যেতো, সেখানে তার ধারে কাছে কেউ আসতো না। সে নিজেও কাউকে এলাউ করতো না।

একবার হলো কী, সাপটির নিকট খুব টায়ার্ড লাগায় বিশ্রামের জন্য সে জায়গা খুঁজছিলো।

অবশেষে কেউ নেই এ রকম একটি জায়গা ঠিক করে সে সেখানে বিশ্রাম নিলো এবং ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে জায়গাটির আশে-পাশে ছিলো অনেক গুলো পিঁপড়ার গর্ত। তাই পিঁপড়ার দল বের হয়ে দেখলো যে, বোনের অহংকারী সাপটি তাদের গর্তের সামনে অচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছে।

এ সুযোগে দলে দলে পিঁপড়া তাকে আক্রমণ করে বসলো। অনেক বেশি পিঁপড়া সাপটিকে জড়িয়ে ধরায় এবং তাদের উপর্যুপরি কামড়ে সাপটি আর সেখান থেকে বেরুতেই পারলো না ও আস্তে আস্তে সে মৃত্যু মুখে পতিত হলো। ফলে বনের মধ্যে যাকে সবাই ভয় পেতো, ছোট ছোট পিঁপড়ার নিকট তার পরাজয় এবং মৃত্যু ঘটলো।

অহংকার পতনের মূল, এ বিষয়ে আসলে অনেক গুলো গল্প জুড়ানো যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ বিষয়টি চির সত্য কথা। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, যখন নদী ভরাট থাকে, তখন মাছেরা পিঁপড়া গুলো খেয়ে নেয়; আর নদী শুকাতে থাকলে তখন সে মাছেরা অনেক সময় মরে ভেসে উঠে নদীতে, আর পিঁপড়ারা তখন সেই মাছ গুলোকেই খেতে থাকে।

তাই সাফল্য পেতে হলে কখনোই অহংকার মনে আনা যাবে না এবং কারো মনে কষ্ট দেয়া বা কাউকে খাটো করে দেখা যাবে না।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

১০। কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প:

সাফল্য পেতে হলে কখনো অলসতা করা যাবে না। সাফল্যের জন্যে কঠিন পরিশ্রমের কোনই বিকল্প নাই।

এ বিষয়ে নিম্নে উল্লেখিত গল্পটি পড়তে পারেন।

এক রাজার ছিলো একটি খরগোশ ও একটি কচ্ছপ। একবার রাজা মশাই যে জিতবে তাকে পুরস্কার দিবেন বলে তাদের দু’জনের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।

আরম্ভ হলো প্রতিযোগিতা।

দৌড়ানোর সময় খরগোশটি দেখলো কচ্ছপ অনেক পিছনে পড়ে গেছে।

তাই সে মনে করলো, একটু বিশ্রাম নেয়া যায়। কচ্ছপ এতো পিছনে যে, কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রওয়ানা দিলেও কচ্ছপের আগে যাওয়া যাবে।

যেই কথা সেই কাজ। পথের ধারে একটা উপযুক্ত জায়গায় খরগোশ বিশ্রাম নেয়া আরম্ভ করলো। বিশ্রামের এক পর্যায়ে তার ঘুম এসে গেলো। এদিকে কচ্ছপ ধীরে ধীরে খরগোশকে ঘুমের ঘোরে রেখে গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেলো এবং পুরস্কার জিতে নিলো।

অপরদিকে খরগোশের স্পীড় কচ্ছপের তুলনায় অনেক বেশি হওয়া শর্তেও শুধুমাত্র অলসতার কারণে ও কঠিন পরিশ্রমের অভাবে সে দৌড় প্রতি যোগিতার প্রথম হতে পারলো না।

তাহলে স্পষ্ট বোঝা গেল সাফল্য পেতে হলে অবশ্যই কঠিন পরিশ্রম এবং চেষ্টার পর চেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

১১। ইতিহাসের আরো কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির উদাহরণ:

১১.ক) একজন কয়েদীর গল্প:

২৭ বছর জেলে থাকার পরেও উনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জিতেছেন।

– তিনি “নেলসন মেন্ডেলা”

১১.খ) পিতৃপরিচয়হীন যুবকের গল্প:

থাকার কোনো রুম ছিল না তার, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমাতেন। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতেন, যেটা দিয়ে খাবার কিনতেন। প্রতি রোববার রাতে তিনি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য।

– তিনি অ্যাপল এবং পিক্সার অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও- “স্টিভ জবস”

১১.গ) বিল গেটস এর গল্প:

আরেক যুবকের নাম জানি, মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। তাঁকে বলা হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সফল ড্রপ আউট। স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরে ১৫৯০ পান তিনি।

কিন্তু কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরির নেশায় তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাম কাটান। ড্রপ আউট হওয়ার ৩২ বছর পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন তিনি।

– তিনি “বিল গেটস”

১১.ঘ) মাক্সিম গোর্কিএর গল্প:

১১ বছর বয়সে এতিম হন। ১২ বছর বয়সে ঘর থেকে পালিয়ে যান। হতাশ হয়ে ১৯ বছর বয়সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অনেক বিখ্যাত বইয়ের লেখন তিনি। তার মধ্যে “আমার বিশ্ববিদ্যালয়” একটি, যদিও তিনি কোন দিন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা সুযোগ পান নাই।

– তিনি বিখ্যাত লেখক, নাট্যকার আর রাজনীতিবিদ “মাক্সিম গোর্কি”

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

১১.ঙ) মাও সেতুং:

আরেকজন, বাবার সাথে মুদি দোকান করতো। পরিবারের এতই অভাব ছিলো যে- স্কুল নাগাত পড়েই তাকে থেমে যেতে হয়েছিলো। সেই ব্যাক্তিই একসময় হয়ে উঠে বিরাট বিপ্লবী নেতা।

– তিনি চীনের প্রতিষ্ঠাতা “মাও সেতুং”

১১.চ) জন মেজরের গল্প:

অভাবের তাড়নায় কুলিগিরি করতো। একদিন বাসের কন্ডাক্টরের কাজের জন্য গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। যে যুবকটি অংকে পারদর্শী নয় বলে বাসের কন্ডাক্টর হতে পারেনি, পরবর্তীতে সে-ই হয় ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। – – নাম “জন মেজর”

১১.ছ) রোনাল্ডো:

আরেক ছেলের, বাবা-মা এতই গরিব ছিলো যে, তার জন্মের পর নাম রেজিস্ট্রি করতেই দু’দিন দেরি হয়। কে জানেন?

সে-ই আজকের ফুটবল কিংবদন্তী!

– নাম “রোনাল্ডো”

১১.জ) জয়সুরিয়া:

বাবা ছিলো জেলে। ছেলেকে সাথে করে বাবা মাছ ধরতো। কারন অন্য স্বাভাবিক আর ১০ জন থেকে তিনি পানির নিচে মাছকে খুব ভাল ভাবে দেখতে পেতেন।

– সেই জেলের ছেলে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সুপারস্টার “জয়সুরিয়া”

১১.ঝ) আলবার্ট আইনস্টাইন:

পড়ালেখায় মারাত্মক দুর্বল ছিলেন তিনি। কোন কিছু মনে থাকত না। ক্লাস এর শেষ বেঞ্চে বসে থাকেন। ফেল করেছেন বারবার।

ক্লার্ক এর চাকরিও করছেন তিনি। পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছেন তিনি তার থিউরি অফ রিলিটিবিটি দিয়ে। নোবেল ও জিতেছেন তিনি।

– তার নাম “আলবার্ট আইনস্টাইন”

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

১১.ঞ) লিওনার্ড দ্য ভিঞ্ছি:

উল্টা লিখতেন তিনি শব্দগুলোকে। পড়ালেখায় একদম শুন্য। উড়োজাহাজ আবিস্কারের ৪০০ বছর আগে তিনি উড়োজাহাজের মডেল এঁকে গেছেন।

– তিনি “লিওনার্ড দ্য ভিঞ্ছি”

১১.ট) ওয়াল্ট ডিসনি:

পরীক্ষায় তিনি সব সময় ফেল। ২২ টা একাডেমিক পুরষ্কার জিতেছেন জিব্বদশায়। তিনি মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক এর জন্মদাতা। মিকি মউসের গলার স্বর তার নিজের দেওয়া।

– তিনি “ওয়াল্ট ডিসনি”

১১.ঠ) পাবলো পিকাসো:

শব্দের খেলা তিনি বুজতেন না। 7 নাম্বার কে তিনি বলতেন উল্টা নাক!!!! এই স্প্যানিশ ভদ্রলোক একজন কবি, লেখক, পেইন্টার, কেমিস্ট, স্টেজ ডিজাইনার, ভাস্কর।

– তিনি “পাবলো পিকাসো”

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

উপসংহার:

আসুন এবার একটু বুঝতে চেষ্টা করি যে, সফলতা মানে কী? মহান রব আল্লাহু তা’য়ালাকে না মেনে শুধু এ দুনিয়ায় নোবেল প্রাইজ পাওয়ার নামই কি সফলতা? নোবেল প্রাইজতো অনেকেই পেয়েছে এবং অনেকের নাম ভালো গুণাগুণ সহ ইতিহাস হয়েছে। কিন্তু এদের ভিতর সবাই কি সফল? মোটেই না। তাহলে সফলতার সংজ্ঞা কী?

শুনুন, ইন্তেকালের আগে শিউরলি ভাবে কেউই জানে না, সে আসলে সফল কিনা বা কতটুকু সফল। কারণ মহান রব কার উপর কতটুকু সন্তুষ্ট, এটা কারো জানা সম্ভব নয়। তাই আপনি যত বড় ডিগ্রীই অর্জন করেন না কেন; আপনি জানতে পারেন না আল্লাহু তা’য়ালা আপনার উপর কতটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট। আপনি আলেম হন বা নোবেল বিজয়ী হন সকলের ক্ষেত্রেই একই সংজ্ঞা। আপনি কি জগৎবিখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত ঈমাম মালেক (রহ:) এঁর বেহেশতের সংঙ্গী একজন রুটি বিক্রেতার ঘটনা জানেন? এ সত্য কাহিনী কি আপনি জানেন না?

তাহলে কী নিয়ে আপনি গর্ব করবেন? বিদ্যার? অর্থের? ইত্যাদি সম্পদের? আচ্ছা এ সম্পত্তি গুলো কি আপনার (?), না আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন? এমন কি মুসলিম ঘরে আপনি যদি জন্মগ্রহণ না করতেন, তাহলে কি এতো সহজে মুসলমান হতে পারতেন? তাছাড়া ইন্তিকালের আগে আপনি কি নিজের অবস্থান কোথায় তা বলতে পারেন? পারেন না। তাহলে আরেকজনকে এমনকি অমুসলিমদেরকে আপনি কিভাবে খাটো করতে পারেন? যেখানে আপনার নিজের অবস্থান সম্পর্কেই আপনি অনিশ্চিত, সেখানে আপনি আরেকজনের বিষয়ে কিভাবে তাকে খাটো করে বা হেয় করে দেখতে বা বলতে পারেন?

এমনওতো হতে পারে, নাউজুবিল্লাহ, আপনার ইন্তেকালের সময় আপনি ঈমান নিয়ে যেতে পারলেন না; অথচ আরেকজনকে অমুসলিম বলে বা নাস্তিক বলে বা মহাপাপী বলে আজ শুধু ঘৃণাই করছেন; কিন্তু সে ইন্তেকালের আগে তাওবা করে ফেললো বা মুসলিম হয়ে গেল; আর খাঁটি ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যেতে পারলো। কী, এমনটি হতে পারে না? পারে, ভাই পারে।

তাহলে মনে রাখবেন, নিজকে মহাদামী ভাবার অথবা আরেক জনকে খাটো করার মতো কোন সূত্রই দুনিয়াতে কারো কাছে নেই।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

আবার মনে করুন আপনাকে মহান রব জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছে বলে, আপনি আজ মানুষের কাছে সম্মানিত; কিন্তু ছলিমুল্লাকে মহান রবই বিদ্যা-বুদ্ধি দেয়নি। তাহলে কোন দৃষ্টিকোন থেকে ছলিমুল্লাহ দোষী হবে? মহান রব ছলিমুল্লাহর বিচার করবেন বা দুনিয়ার জীবনে তার পরীক্ষা নিবেন একভাবে আর আপনার পরীক্ষা নিবেন অন্যভাবে। পার্থক্য এতোটুকু। কিন্তু জীবন শেষে তার বিচার তার অবস্থান মতো হবে, আর আপনার বিচার আপনার অবস্থান মতো হবে। বরং আপনার যেহেতু সম্পত্তি বেশি, আপনাকে আল্লাহ বেশি নেয়ামত দিয়েছেন; তাই আপনার হিসাবটা আরো জটিল হতে পারে।

তবে যাদেরকে মহান রব জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছে, তাদেরকে তা কাজে লাগাতে হবে। নতুবা সম্পদ অপচয়ের দোষে দুষ্ট হবেন অথবা নাশকুরির অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হতে পারেন।

আর এ ধরনের কোন কাজ করতে কখনো হতাশ হবেন না। আপনি উপরের গল্প সমূহে উল্লেখিত সফল মানুষদের ইতিহাসের মধ্যে নিশ্চয়ই দেখতে পেয়েছেন কেমন করে তারা নানান মুখী ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে সফলতা পেয়েছে। তাহলে আপনার ক্ষেত্রে সফলতা এতো সহজ হবে কেন বলেন?

তাহলে যেহেতু তারা জীবনের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সফলতা পেয়েছিলেন। আর এভাবে আপনিওতো পেতে পারেন, তাইনা?

আরে ভাই হোক না সেটা দুনিয়ার সফলতা। আমি কাউকে খাটো না করতে, তুচ্ছ না করতে পরামর্শ দিতে গিয়ে আখিরাতের বিষয়টি টেনে এনেছিলাম।

কারণ আমাদের একটা নেচার এই যে, যখনই আমরা দুনিয়াতে কিছু একটা অর্জন করতে পারি, ঠিক তখনই শুরু করি অহংকারের, মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের।

মূলত এ পরামর্শ দিতে গিয়েই আখিরাত নির্ভর এ কথা বলেছিলাম যে, প্রকৃত সফল কে, তা ইন্তেকালের পর ছাড়া আমরা কেউই বলতে পারি না।

কিন্তু এ কথার অর্থ এই না যে, আপনি দুনিয়াতে সফল হবেন না। এবং দুনিয়াতে সফলতার কোনই প্রতিফল আখিরাতে পড়বে না।

দেখুন দুনিয়াটা আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়াতে কাজ না করলে, না দুনিয়া পাবেন; না আখিরাত পাবেন? কোনটিই পাবেন না।  তাই আখিরাতে কিছু পেতে হলে দুনিয়াতে কিছু করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নাই।

মূলত যে দুনিয়াতে যত বেশি সফল, আখিরাতে সে তত বেশি সফল। কিন্তু যদি এমন হয়, কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে সফল, কিন্তু তার ইমানই নেই; তাহলে কী মানুষ হিসেবে সে সফল? হ্যাঁ, আখিরাতে সফল হতে হলে অবশ্যই আপনার ঈমান থাকতে হবে এবং আপনাকে মানুষ হতে হবে।

আমি শুধু এ বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে উপরের বর্ণনাটি দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম প্রকৃত সফলকে তা আমরা কেউ জানি না।

অতএব প্রমাণিত হলো, জ্ঞানবান ব্যক্তিদেরকে আখিরাতে সফল হতে হলে, তাদেরকে দুনিয়াতে সফল হতেই হবে এবং দুনিয়াতে সফল না হয়ে আখিরাতে সফলতা; ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়।

অতএব আপনাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বড় আলেম, মুফতি সাহেব, মানুষের সেবক, নোবেল বিজয়ী, সফল উদ্যেক্তা, নিত্য নতুন মানুষের প্রয়োজনীয় ও বৈজ্ঞানিক দ্রব্যের আবিষ্কারক বা উদ্ভাবক  ইত্যাদি হতেই হবে! এবং কখনো এর হাল ছাড়বেন না। প্রয়োজনে আপনার শেষ চেষ্টা পর্যন্ত আপনি চালিয়ে যান।

আর তাই, লেগে থাকুন সৎ ভাবে; দেখবেন ইনশাআল্লাহ! বিজয় আপনারই হবে।

অন্যদিকে যারা সাফল্য নামীয় বস্তুটার জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছেন (?), তারা কি একবার ভেবেছেন, আসলে আপনি কী করছেন এবং কেন করছেন বা কার জন্য করছেন?

দেখুন আজ থেকে ২০০ বছর পর আপনার বাড়িতে, আপনার ঘরে যারা বসবাস করবে, যারা আপনার জায়গা জমি ভোগ করবে আপনি তাদের চিনেন না।

তারাও আপনাকে চিনবেনা।

কারন তাদের জন্মের অনেক আগেই আপনি কবরবাসি হয়ে যাবেন।

আর ততদিনে হয়তো মুছে যাবে আপনার নাম নিশানা।

কবরটাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে হয়তো।

আপনার সন্তানেরা যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন হয়ত মনে পড়লে দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলবে!

কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর তাদের সন্তানরা তাদের যতটুকু মিস করবে আপনাকে ততটুকু মিস করবে না।

হয়তোবা বাবার কবর জিয়ারত করে দোয়া করার সময় দাদা হিসেবে আপনার জন্যেও একটু করবে।

কিন্তু তার পরের প্রজন্ম আর মনে রাখবেনা।।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

আবার দেখুন প্রায় ২০০ বছর আগে মারা গেছে আপনার দাদার দাদা।

যিনি আপনার পূর্ব পুরুষদের জন্য ঘর বাড়ি, জায়গা জমি রেখে গেছেন। একই বাড়ি, একই জায়গা জমি আপনি এখন ভোগ করছেন।

কিন্তু উনার কবরটা কোথায় সেটা আপনি কি জানেন? জানেন না।।

হয়ত আপনার দাদার পিতা জানতেন।

কিন্তু দাদার পিতা তো বেঁচে নেই, দাদাও বেঁচে নেই।

তবে সাত পাঁচ করে যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, বা গড়তেছেন, সেটা কবরে নিয়ে যেতে পারবেন না।

আর যাদের জন্য রেখে যাচ্ছেন তারাও আপনাকে মনে রাখবে না এটা নিশ্চিত!

অন্যের সম্পত্তি জবর দখল করে ভাবছেন আপনি জিতে গেছেন!? সফলকাম হচ্ছেন?

সুদ, ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য ইত্যাদি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে ভাবছেন আপনি জিতে গেছেন?

তাহলে আপনি ভুল করছেন!! মস্ত বড় ভূল করছেন!!!

আপনি সাফল্য নামীয় বস্তুটার জন্যইতো এ রকম করেছিলেন, তাই না?

কারুন, হামান, আবদুল্লা বিন উবাই; এদের সবাইতো সাফল্য চেয়েছিলো; কিন্তু তাদের অবস্থান আজ কোথায়?

দু:খের বিষয় এ জাতীয় লোকদের নিকট হয়তো আমার এ লিখা পৌঁছুবে না। আর যাদের কাছে পৌূঁছুবে তারাও হয়তোবা পূর্ব থেকে আমাকে একভাবে তাদের ব্রেনে গেঁথে রেখেছেন, যে কারণে এ লিখা দ্বারা তারা কোন ফল পাবেন না। কিন্তু ভাই আপনি যদি আমাকে না চিনেন বা এ গল্পের লিখক কে?, সে চিন্তা না করেন, কী লিখা হয়েছে শুধু তা চিন্তা করেন, তবেই আপনি আমার এ লিখা থেকে কাঙ্খিত ফল পেতে পারেন।

দেখুন হাতে আমাদের সময় খুব কম। এইতো আমার পাশের বাড়ির জাহাঙ্গীরের হঠাৎ করে পেট ব্যাথা আরম্ভ হলো, আর ২/৩ ঘন্টার ব্যবধানে দুনিয়া থেকে চলে গেলো সে। এভাবে কত রহিমুল্লাহ ঘুমের মধ্যে চলে গেলো, আর কতজন যে রোড এক্সিডেন্টে চলে গেলো, তার হিসাব আছে আপনার কাছে?

এ রকম মৃত্যু আপনার আমার যে হবে না, তার কি কোন গ্যারান্টি রয়েছে?

তাই বলছিলাম কেউ যদি টাকা পায়, সম্ভব হলে টাকাটা দিয়ে দিন। কারো সাথে মনোমালিন্য বা হিংসা থাকলে তাও মিটিয়ে ফেলুন। আমি জানি দুষ্ট জাত, এতে আপনাকে আরো সহজ মনে করে আরো তাচ্ছিল্য করবে। তবে যদি যে কোন ভাবে মিশে যেতে পারতেন, এটা আপনার জন্যই ভালো হতো।

(সফলতার গল্প ১, এ পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে)

ভালো করে মনে রাখবেন আমাদের সময় খুব কম! এ দুনিয়াটা আমাদের একেবারেই ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত পক্ষে এর কোনটিরই মালিক আপনি নন।

প্রকৃত মালিকের নোটিশ আসলেই সব কিছু আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে।  তাই এই সুদ, ঘুষ ,দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার,সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ইত্যাদিতে, কোন লাভ নেই ভাইজান। কোন লাভ নেই।

সময় থাকা কালীন ভালো হয়ে কবরের খোরাক সংগ্রহ করুন ঐটাই বুদ্ধিমানের কাজ।।

আসুন নিজেকে সৎ মানুষ হিসেবে তৈরি করি; পরকালের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি এবং আল্লাহু তা’য়ালার ইবাদতের মাধ্যমে চেষ্টার পর চেষ্টা করে সাফল্য অর্জন করি।

মূলত নেক আমলই আপনার আমার জন্য প্রকৃত সম্পদ।। হে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন। আমিন। ছুম্মা আমিন।।

 

আজকের বাংলা ইংরেজি ও আরবি তারিখ জানতে এবং আজকের পুরো দিনের নামাজ ও রোজার সময়সুচি দেখতে

এখানে ক্লিক করতে পারেন

আবার শুদ্ধরূপে কোরআন তিলাওয়াত শিখতে

এখানে ক্লিক করতে পারেন